চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার লিখবেন যেভাবে

রেটিং দিন

একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে চাকরির আবেদন করতে হয়। অনেকেই মনে করেন, সিভি দাখিল করলেই আবেদনের কাজ শেষ। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে এনজিও ও আইএনজিওগুলো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই কভার লেটার বা চাকরির আবেদনপত্রের কথা উল্লেখ করে দেয়। কার্যতই চাকরির আবেদনপত্র এখন চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার গুরুত্বপূর্ণ?

গুগল ঘাঁটলেই এর রেশ পাওয়া যায়। গুগলের সার্চ বক্সে হাজার হাজার মানুষ “চাকরির আবেদনপত্র”, “কোম্পানির চাকরির আবেদনপত্র”, “মাদ্রাসায় চাকরির আবেদনপত্র”, “শিক্ষক পদে চাকরির আবেদনপত্র” ও “এনজিও চাকরির আবেদনপত্রের নমুনা” খুঁজেন।

কিন্তু কোথাও কোথাও চাকরির আবেদনপত্রের নমুনা এতটাই জটিলভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেগুলো অনুসরণ করলে কাজের কাজ কিছুই হয় না-বরং সময় ও শ্রমের অপচয় হয়।

অনেকে এখনো ভাবেন, সিভি জমা দিলেই হয়ে গেল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গুগলে প্রতিদিন হাজারো মানুষ খোঁজেন-

  • চাকরির আবেদনপত্র
  • কোম্পানির চাকরির আবেদনপত্র
  • মাদ্রাসায় চাকরির আবেদনপত্র
  • শিক্ষক পদের জন্য আবেদনপত্র
  • এনজিও চাকরির আবেদনপত্রের নমুনা

কিন্তু অনলাইনে যেসব আবেদনপত্রের নমুনা পাওয়া যায়, সেগুলোর অনেকগুলোই জটিল, অপ্রয়োজনীয় তথ্যপূর্ণ এবং ব্যবহার উপযোগী নয়। সেগুলো অনুসরণ করলে বরং সময় ও শ্রমই নষ্ট হবে।

একটি আদর্শ কভার লেটার যেমন হওয়া উচিত

চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার হবে সহজ, সংক্ষিপ্ত ও প্রাণবন্ত। যেখানে একজন প্রার্থী আবেদিত পদের জন্য কতটা উপযুক্ত, প্রতিষ্ঠানের জন্য তাকেই কেন প্রয়োজন, এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে হবে।

চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার হবে সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা। এতে থাকতে হবে-

  • প্রার্থীর যোগ্যতা ও দক্ষতার সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন
  • কেন প্রার্থী এই পদটির জন্য উপযুক্ত
  • প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন তাকে নিয়োগ দেওয়া উচিত
  • প্রার্থী প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে কতটা আগ্রহী

বাস্তব চিত্র:

বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও প্রাইভেট কোম্পানির নিয়োগকর্তারা বলেন, মাত্র ৫% প্রার্থী সিভির সঙ্গে কভার লেটার জমা দেন। এর মধ্যে অনেক কভার লেটার আবার অসম্পূর্ণ, বানান ও বাক্য গঠনে ভুলে ভরা। ফলে সেসব সিভি বাছাইতেই বাদ পড়ে যায়

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক একটি সুন্দর ও মার্জিত চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার কীভাবে লিখতে হয়-

চাকরির আবেদনপত্র লিখবেন যেভাবে (Cover Letter Format in Bangla)

চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার হচ্ছে একটি ফর্মাল চিঠি, যা সিভির সঙ্গে জমা দিতে হয়। যেকোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদনের সময় জীবনবৃত্তান্ত বা সিভির পাশাপাশি একটি কভার লেটার দেওয়া আবশ্যক।

ইমেইলের মাধ্যমে যদি চাকরির আবেদন পাঠান, তাহলে একই মেইলে প্রথমে কভার লেটার এবং পরে সিভি সংযুক্ত করতে হবে।

কভার লেটারে মূলত আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতার সুস্পষ্ট বিবরণ দেওয়া হয় এবং কেন আপনি এই পদের জন্য উপযুক্ত, তার ব্যাখ্যা থাকে। চাকরির ধরন অনুযায়ী কভার লেটারের ধরন বদলালেও মূল কাঠামো একই থেকে যায়।

চাকরির আবেদনপত্র বা কভার লেটার লেখার নিয়ম

চাকরির ভিন্নতার অনুসারে কভার লেটার ভিন্ন হলেও মূল বিষয় একই থাকে। সাধারণত একটি চাকরির আবেদনপত্রে তিনটি বিষয় থাকে।

  • সূচনা
  • মূল অংশ
  • পরিসমাপ্তি

সূচনা:

চাকরির আবেদনপত্র শুরু হয় কভার লেটার দিয়ে। আপনার পরিচয়, আবেদনের কারণ, কীভাবে উক্ত নিয়োগ সম্পর্কে জেনেছেন এবং এই পদে আপনার চাকরি করার ইচ্ছে কেন ইত্যাদি বিষয়গুলো সংক্ষেপে লিখবেন।

উদাহরণ:
“যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, গত ১৮.০১.২০২২ তারিখ ‘ঢাকা পোস্ট জবস’ পাতায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে, পেরেছি আপনার প্রতিষ্ঠানে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ)’ পদে কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে।”

মূল অংশ:

কভার লেটারের মূল অংশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশে পদের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতার বিষয়গুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করতে হবে। আপনি চাইলে পূর্বের কাজের বিবরণ ছোট আকারে দিতে পারেন, যেটি আপনার পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে। চেষ্টা করবেন দুটি প্যারাগ্রাফে যাবতীয় অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং অর্জন সমূহ বর্ণনা করতে।

উদাহরণ:
“বিগত পাঁচ বছর ধরে পদ সংশ্লিষ্ট খাতে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছি। ফলে পদ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি কার্যক্রম সম্পর্কে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে।”

পরিসমাপ্তি:

কভার লেটারের শেষ অংশে উক্ত পদে চাকরি করার বাসনা ব্যক্ত করুন। কীভাবে তারা আপনার সঙ্গে পরবর্তীতে যোগাযোগ করবে তাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন। পাশাপাশি নিজের ইমেইল এবং অন্যান্য যোগাযোগের তথ্য দিয়ে ইন্টারভিউতে দেখা করার কথা ব্যক্ত করুন। আপনার কভার লেটার সময় নিয়ে পড়ার জন্য নিয়োগকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করবেন না। একদম শেষে আপনার নাম এবং স্বাক্ষর দিবেন।

Leave a Comment